আজ তাঁর জন্মদিন।একজন আদ্যপ্রান্ত বাঙালি পোষাক পরা লোহার মানুষের জন্মদিন।রবীন্দ্রনাথ ও এই রকম দেশে তাঁর মতো মানুষের জন্ম নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।তাঁর দয়া জ্ঞান বিদ্যা মাতৃভক্তি মনিষা নিয়ে কাহিনীর ছড়াছড়ি। তিনি পুজিত হন ঈশ্বর নামে,অথচ আমরা তাঁকে অপমান অবজ্ঞা কম করিনি,আজো কি তাঁকে অনুসরণ করতে পারি?বোধহয় না। তিনি বিধবাদের দুঃখে কাতর হয়ে বিধবা বিবাহ দেওয়ার কথা উচ্চারণ করলে,আমরা ধর্মভীরুরা গেল গেল রব তুলেছি।তাঁকে উপহাস অসম্মান কম করি নি। এই নিয়ে কোলকাতার তদানীন্তন তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ তাঁর বিপক্ষে গিয়েছেন।সংখ্যার হিসেবে তিনি গোহারা হেরেছেন। হেরেও পথ ছাড়ার লোক তিনি নন,তাই লড়াই চলেছে শেষতক।তিনি বিধবা -বিবাহ শাস্ত্রসন্মত একথা বোঝাতে ছুটে গেছেন নবদ্বীপ এর পন্ডিত মন্ডলীর কাছে।সেখানে ও তিনি ঘোরতর অপমানিত প্রত্যাখাত হয়েছেন।১৮৫৩ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। বিবেক আর মনুষত্বের ডাকের চেয়ে এই পোড়া দেশে শাস্ত্রের বাক্য অনেক বেশি শক্তিশালী এটা তিনি বুঝেছেন।তাই এবার শাস্ত্র খুঁজে হাজির করলেন সেই অমোঘ যুক্তি “নষ্টে মৃতে প্রবজ্যিতে ক্লীবে চ….(পরাশর সংহিতা)অর্থাৎ মৃত ,সংসারত্যাগী ,ক্লীব ব্যক্তির স্ত্রী পুনরায় বিবাহ বিধি সন্মত।এরপর তো ইতিহাস ।১৮৫৬ বিধবা বিবাহ আইন পাশ হলো। তিনি তাঁর পরিবার আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে বিধবা বিবাহ দিলেও সকল বাঙালি কি আজো বিধবা বিবাহকে সানন্দে মেনে নেন। তিনি মেয়েদের লেখা পড়া শেখাতে বলেছেন, আমরা মনুকে আশ্রয় করে বলেছি ” বাল্যে পিতুর্বশে তিষ্ঠেৎ পাণিগ্রাহস্য যৌবনে।পুত্রাণাং ভর্তরি প্রেতে ন ভজ্যেৎ স্ত্রী স্বতন্ত্রতাম।”অর্থাৎ নারী পিতা স্বামী পুত্রের অধীন ,তার স্বাধীনতা শাস্ত্র বিরোধী।গার্গী -চার্বাক এদেশে জন্মালেও মনু-সংহিতাতেও এদেশের শাসক থেকে একাংশের মানুষ ভজনা করে আজো। তাঁদের কাছে নারীর রাতে পথে নামা,গলা উচিয়ে কথা বলা অপরাধ আজো।নারীর সমানাধিকার আজো অধরা? আসলে তাঁর মতো মুক্ত চিন্তার মানুষেরা অনেক বেশি একা।তাইতো এদেশে তাঁর উত্তরসূরী গৌরী লঙ্কেশ দাভেলকর পানসারেদের খুন হতে হয় একালেও।তিনি কোনো দল তৈরি করেন নি,প্রতিষ্ঠা করেন নি আশ্রম ,তা়ঁর কোনো মন্ত্রশিষ্য নেই, তিনি আজো একক ঈশ্বর, যিনি সদর্পে আমাদের চেতনায় লাথি মেরে বলতে পারেন” চোখের সামনে মানুষ অনাহারে জরা ব্যাধিতে মরবে ,আর মানুষ ভগবান ভগবান করবে ,এমন ভগবৎ প্রেম আমার নেই….”এমন দুঃসাহসী কথা বলার দুঃশাহস তাঁর ই বর্ণপরিচয় পড়া কজনের আছে?আসলে তিনি যে বর্ণভেদের দেশে বর্ণপরিচয়ের স্রষ্টা ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর।