আমরা প্রায় সকলেই অবগত যে, গত ১৪ বছরে মমতা ব্যানার্জি আপনার আমার করের টাকায় ১৬ টি কমিশন গঠন করেছেন। এরমধ্যে ৬ টি কমিশন আছে যেগুলি তৃণমূল কংগ্রেস শাসনের ঘটনাবলী (আমরির অগ্নিকাণ্ড, সারদা কেলেঙ্কারি, তেহট্টে পুলিশের গুলি চালানো ইত্যাদি) বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। ১০ টি কমিশন তৈরি হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার অথবা সিপিআই(এম)-এর ত্রুটি অন্যায় খুঁজে বের করার জন্য। এরমধ্যে আছে কাশিপুর-বরানগর গণহত্যা, সাঁইবাড়ির ঘটনা, বিজন সেতুর ওপর আনন্দমার্গীদের পুড়িয়ে মারা, মরিচঝাঁপি, ১৯৯৩ এর ২১ শে জুলাই রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে ১৩ জনের মৃত্যু, রিজওয়ানুর রহমানের অস্বাভাবিক মৃত্যু, বানতলা, ধানতলা, রাজারহাটে জমি অধিগ্রহণ, নিউটাউনে ফ্ল্যাট বন্টন। আজ পর্যন্ত একটা তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করার সাহস দেখাননি মমতা ব্যানার্জি। হিম্মত থাকলে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করুন তিনি। সরকারের সর্বেসর্বা তো তিনিই। তাঁরই মনপসন্দ লোকজন দিয়েই তো কমিশনগুলো গঠন করেছেন। তাহলে অসুবিধা কোথায় ? আসলে উনি নিজেও জানেন বাম আমলে ঘটা প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হয়েছে এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও হয়েছে। এখন উনি লোক দেখানো নাটক করছেন। চিটফান্ড কেলেঙ্কারি থেকে নিজেকে এবং নিজের দলের নেতা মন্ত্রীদের বাঁচাতে শুধু আইনজীবীদের পেছনে কত কোটি টাকা খরচ করেছেন মমতা ব্যানার্জ ? চিটফান্ড থেকে কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তাঁর দল ? বালি, গরু, চাল, পাথর, চাকরি চুরি করেছে কারা ? তৃণমূল আর চোর তো এখন সমার্থক শব্দ।
আরজিকর হাসপাতালে পড়ুয়া চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করার অন্যতম অভিযুক্ত ঐ হাসপাতালের তৎকালীন সুপার সন্দীপ ঘোষকে বাঁচাতে মুখ্যমন্ত্রী এত মরিয়া কেন ? তৎকালীন কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকেও অভিযোগ থেকে মুক্ত করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। এর পেছনে রহস্য কী ? হাসপাতাল থেকে শুরু করে শিক্ষাকেন্দ্র-এরাজ্যে কোন জায়গাতেই মহিলারা এখন নিরাপদ নন। রাজ্যে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে একের পর এক নারী নির্যাতন, ধর্ষণ এবং শ্লীলতাহানীর ঘটনা। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ-সর্বত্র। অপরাধীরা বেপরোয়া। তাদের হয়ে সাফাই দিতে নামছে শাসক দলের নেতারা, মনোবল বাড়ছে দুষ্কৃতীদের। সিংহভাগ ঘটনাতেই অপরাধীদের সঙ্গে শাসক তৃণমূলের সরাসরি যোগের ছবি সামনে আসছে। কার্যত দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে রাজ্যের বিস্তীর্ণ প্রান্ত। রাজ্যে আইনের শাসনের পরিবর্তে চলছে শাসকের আইন। পুলিশ প্রশাসন সম্পর্কে অপরাধীদের কোন ভয়ভীতি নেই। উল্টে পুলিশকে যেন তারা নিজেদেরই লোক বলে মনে করে। পুলিশ এখন খাটের নীচে, টেবিলের তলায় আশ্রয় নেয় তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য। বীরভূম থানার ওসিকে অত্যন্ত কদর্য এবং কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করার পর অনুব্রত মন্ডলের শাস্তির পরিবর্তে দলে পদোন্নতি ঘটে, তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয় মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে। এটা কিসের বার্তা বহন করে ? অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে ভোট লুট করা “দক্ষ কর্মীর” সংখ্যা কমে যাবে ?
বর্তমানে রাজ্যের ঋণ প্রায় সাত লক্ষ কোটি টাকা। প্রত্যেক রাজ্যবাসীর মাথায় সত্তর হাজার টাকার ঋণের বোঝা। রাজ্যের এই বেহাল অর্থনীতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অবিমৃশ্যকারিতা দায়ী নয় ? রাজ্যের নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিলের ১৬২০ কোটি টাকা মমতা ব্যানার্জির সরকার ব্যাঙ্ক থেকে সরকারের ট্রেজারিতে সরিয়ে নিয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ টাকার একটি অংশ রাজ্য সরকার ক্লাব, মেলা, খেলা, বিজ্ঞাপন, উৎসব সহ অন্যান্য খাতে খরচ করছে। এই তহবিলের টাকা এভাবে খরচ করার অধিকার আছে তাঁর ? নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা মুখ্যমন্ত্রীর পারিবারিক সংস্থা ‘লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস’-এ খেটেছে। এই সংস্থার মালিক মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি। এই সংস্থার অন্যতম কর্ণধার কালিঘাটের কাকু, সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠস্বরের নমুনা সিবিআই সংগ্রহ করেছে। তারপর সবকিছু চুপচাপ। কন্ঠস্বরের নমুনা নিয়ে কি সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র বানানোর তোড়জোড় চলছে ? অরবিন্দ কেজরিওয়াল আবগারি কেলেঙ্কারিতে জেল খাটেন, জমি কেলেঙ্কারিতে হেমন্ত সরেন, পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে জেল খাটেন লালু প্রসাদ। আর কোন জাদুবলে পিসি-ভাইপো আজও জেলের বাইরে আছেন ?
এসএসসি-তে প্রকৃত যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের বাঁচানোর কোনওরকম চেষ্টা করলেন না মুখ্যমন্ত্রী। শোনালেন এ বি সি ডি প্ল্যানের কথা। সবই ফানুস। আসলে তাঁর দলের নেতা মন্ত্রীদের জনরোষ থেকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেত ‘সঠিকভাবে’ যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করলে। পুরো দলটাই বঙ্গোপসাগরে ভেসে যেত। সাময়িক মুক্তি মিলেছে। এ খেলা এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। পিকচার আভি বাকি হ্যায়। তারপরেও হম্বিতম্বি কমে না এদের। লোক লজ্জার মাথা খেয়ে রাজনীতি করে এরা। সম্প্রতি কলকাতার কলামন্দিরে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল পঃবঃ উর্দু আকাদেমি। আলোচ্য বিষয় ছিল “হিন্দি সিনেমায় উর্দুর ভূমিকা।” প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল বিশিষ্ট কবি, লেখক জাভেদ আখতারকে। এতে আপত্তি ওঠে কিছু মুসলিম মৌলবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে। কারন, জাভেদ আখতার নাস্তিকতায় বিশ্বাসী। মমতা ব্যানার্জির সরকার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় মুসলিম মৌলবাদীদের তুষ্ট করার জন্য। এতে রাজ্যের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে ? আর কতদিন এই তুষ্টিকরণের রাজনীতি করবেন ? হিন্দুদের ভোট পেতে ২৬০ কোটি টাকায় দীঘায় জগন্নাথ মন্দির করেছেন, তাহলে মুসলিম, খ্রিস্টান সহ অন্যান্যদের ভোট পাওয়ার জন্য যা যা তৈরির এখনই শুরু করুন। সরকারের কাজ এখন মন্দির, মসজিদ নির্মাণ করা। বিজেপির সঙ্গে সরাসরি ‘প্রতিযোগিতা মূলক সাম্প্রদায়িকতায়’ লিপ্ত মমতা ব্যানার্জি। এখন রাজ্যে বিজেপির হনুমান বাহিনীর সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দলের ‘রত্নরাও’ রাম নবমী, হনুমান জয়ন্তী, গঙ্গা আরতী পালন করছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি-র পক্ষ থেকে প্রকাশিত তালিকায় যে সমস্ত শিক্ষকরা ‘দাগি’ বলে চিহ্নিত হয়েছেন (১৮০৬ জন), মমতা ব্যানার্জি অতি সম্প্রতি তাদের ‘বেচারা’ বলে সম্বোধন করে, তাদের প্রতি অতি সহানুভূতিশীল হয়ে বলেছেন, ‘কীভাবে এদের শিক্ষকের বদলে গ্রুপ-সিতে চাকরি দেওয়া যায় তা আইনের পথে দেখবেন।’ প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট এই সমস্ত দাগিদের পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয় নি এবং ১২ শতাংশ সুদ সহ টাকা ফেরত দিতে বলেছে। “দাগি শিক্ষকদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর এত দরদ কেন”-প্রশ্ন করছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্বয়ং। চাকরিহারা গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীদের মাসে যথাক্রমে পঁচিশ হাজার এবং কুড়ি হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “ভাতা দেওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো কেন !” তিনি ভাতা প্রদানের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন। কারো বুঝতে অসুবিধা আছে মুখ্যমন্ত্রীর এত দরদের কারন সম্পর্কে ? কলকাতায় গান্ধীমূর্তির পাদদেশে খোলা আকাশের নিচে দিনের পর দিন যে সব যোগ্য বঞ্চিত শিক্ষক-শিক্ষিকারা আন্দোলন করছিলেন তাঁদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দরদ তো লক্ষ্য করা যায়নি।
রাজ্য সরকারী কর্মচারী ও শিক্ষকদের ডিএ এবং বকেয়া ডিএ না দেওয়ার জন্য তিনি সুপ্রিম কোর্টে নামীদামী আইনজীবী দাঁড় করালেন। খরচ করলেন কোটি কোটি টাকা। অথচ তিনিই বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন বলেছিলেন, যে সরকার কর্মচারী-শিক্ষকদের ডিএ দিতে পারে না তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনও অধিকার নেই। এটা দ্বিচারিতা না ? বর্তমানে তৃণমূল সরকারের এক একজন মন্ত্রীর সরকার প্রদত্ত দৈনিক গড় আয় ৪৯৩১.৫০ টাকা। মন্ত্রীদের পাশাপাশি তৃণমূল দলেরও আয় বেড়েছে যথেষ্ট। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে টিএমসি দলের আয় হয়েছে ৬৪৬ কোটি টাকা, যা গত আর্থিক বছরের থেকে ৩১৩ কোটি টাকা বেশি। এত টাকার উৎস কী ? শুধুই ইলেকশন বন্ড ?
গত ২৩ শে জুন’২৫ কালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয়লাভ করে তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের পৈশাচিক উল্লাসের বলি হয় তামান্না খাতুন নামের এক ১০ বছরের শিশু কন্যা। বোমা ছুঁড়ে খুন করা হয় ঐ শিশু কন্যাকে। এফআইআর-এ উল্লেখিত তামান্না খাতুনের খুনী ২৪ জনের মধ্যে ১৪ জন তৃণমূল দুষ্কৃতী আজও অধরা কেন ? মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে জবাব দিতে হবে না ? দুষ্কৃতীরাজ এবং দুর্নীতি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজ্যে। মমতা ব্যানার্জি এর দায় অস্বীকার করতে পারেন ? যে রাজ্যে কন্যাশ্রীর মতো প্রকল্প চালু সেই রাজ্য নাবালিকা বিয়ের তালিকায় দেশের মধ্যে শীর্ষ স্থানে কেন ? জবাব দিন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য বিজেপি সভাপতি এবং স্বয়ংসেবক শমীক ভট্টাচার্য সম্প্রতি বলেছেন, “আমরা না থাকলে সেদিন তৃণমূলের জন্মই হতো না। সেদিনের লড়াইতে যা প্রয়োজন ছিল আমরা তাই করেছি। ১৯৯৮ সালের ১ লা জানুয়ারি কংগ্রেস ভেঙে মমতা ব্যানার্জি যে তৃণমূল কংগ্রেস দল তৈরি করেন তাতে সরাসরি সহযোগিতা করেন আদবানি এবং বাজপেয়ী।” আমরা তো দীর্ঘ দিন যাবত একথাই বলে আসছি যে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মদাতা আরএসএস। মমতা ব্যানার্জি এখনও চুপ কেন ? আমাদের কথা বাদ দিন, নিদেনপক্ষে জবাব দিন শমীক ভট্টাচার্যের কথার।
গত ১ বছরে রাজ্যের স্কুলগুলিতে প্রায় ১০ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী কমেছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া ভর্তি হয়েছিল কমবেশি ১ কোটি ৭০ লক্ষ। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এই সংখ্যাটি ছিল প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ। এর কারন কী ? প্রথমত, অল্প বয়সেই ছাত্রীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, ছাত্ররা লেখাপড়া ছেড়ে পেটের তাগিদে কাজের খোঁজে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ভিনরাজ্যে চলে যাচ্ছে। তৃতীয়ত, যে সমস্ত পাঠ্যপুস্তক ছাত্রছাত্রীদের পড়ার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, বিশেষত প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের। চতুর্থত, একটু সামর্থ্য যাঁদের আছে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করছেন। পঞ্চমত, মেধার ভিত্তিতে নয়, স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে টাকার বিনিময়ে। এদের কাছে সন্তানকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য পাঠাবো না-অভিভাবকদের মধ্যে এই মানসিকতা কাজ করছে। তাছাড়া স্কুলগুলির পরিকাঠামোও পঠন পাঠনের উপযুক্ত নয়। এছাড়া আরো কারন আছে সেগুলি আর উল্লেখ করলাম না। আসলে বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে এরাজ্যে সরাসরি মমতা ব্যানার্জি উৎসাহিত করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের মতো হাত গুটিয়ে নিতে চাইছেন শিক্ষার মতো পরিষেবা ক্ষেত্র থেকে। ফেল কড়ি মাখো তেল অথবা টাকা যার শিক্ষা তার এইধরনের বাক্যগুলিকেই পাথেয় করে চলতে চাইছে তৃণমূল।
তৃণমূল শাসনে গত ১৪ বছরে এরাজ্য থেকে ৬৬৮৮ টি শিল্প কারখানা পাততাড়ি গুটিয়ে ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছে, যার বেশিরভাগটাই গিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। বীরভূমের দেউচা-পাঁচামিতে আদিবাসী পরিবারের লোকজনদের জবরদস্তি উৎখাত করে কয়লাখনির নাম করে ব্যাসল্ট পাথর বিক্রির পরিকল্পনা করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। এই প্রকল্পে নাকি ১ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে এবং আগামী ১০০ বছরের বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা মিলবে। সব ডাহা মিথ্যা কথা। আসলে রাজ্য সরকার ৫০০০ কোটি টাকার ব্যাসল্ট পাথর বিক্রি করবে দেউচা-পাঁচামি থেকে। এরাজ্যে চুরি জোচ্চুরিকে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রকৃত সমস্যা থেকে দূরে রাখার জন্য সমাজের সবথেকে শক্তিশালী অংশ যুবসমাজের একটা বড় অংশের হাতে কাজের বদলে তুলে দিয়েছেন মদের বোতল আর অস্ত্র। শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা আজ দিশেহারা। এদের ভবিষ্যৎ আজ ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত। সিঙ্গুরে প্রায় ৮০ শতাংশ গড়ে ওঠা একটা কারখানাকে ধ্বংস করে মমতা ব্যানার্জি বার্তা দিয়েছিলেন তিনি ‘শিল্পতাড়ুয়া’। এরাজ্যে যতই ঢাকঢোল পিটিয়ে তিনি ‘বিশ্ব বঙ্গ বানিজ্য সম্মেলনে’র নাম করে দেশ বিদেশের শিল্পপতিদের ডেকে আনুন না কেন, কেউই ‘শিল্পতাড়ুয়ার’ রাজ্যে বিনিয়োগ করেন না। সম্মেলনে আসেন, খাওয়া দাওয়া গল্প করে সটান সরে পড়েন। তবে ‘বিনিয়োগের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি’ দিতে কেউই কার্পণ্য করেন না।
কালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের মোলান্দি গ্রামে আমাদের পার্টির রাজ্য সম্পাদক কমরেড মহঃ সেলিম যেদিন নিহত তামান্নার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সেদিন তামান্নার মা সাবিনা ইয়াসমিন বিবি কমরেড সেলিমের হাত ধরে বলেছিলেন, “রাজ্যের কোনও মায়ের কোনও তামান্না যাতে এই জানোয়ারদের হাতে শেষ না হয়, মরে না যায়, তা দেখতে হবে আপনাদের। এই ক্রিমিনালদের শাসন শেষ করতে হবে এ রাজ্য থেকে। যাতে ভবিষ্যতে ওরা আর কোনও তামান্নাকে মারা তো দূরের কথা, মারার কথা ভাবার আগেও সাতবার ভাববে। আপনারা সেটা করুন। এই ক্রিমিনালদের রাজত্ব শেষ করুন।” তামান্নার পরিবারের লোকজন আমাদের পার্টির সমর্থক। সেই কারনেই তো ঐ জল্লাদরা তামান্নাকে নৃশংসভাবে খুন করেছে। তামান্নার মা সাবিনা বিবির আর্তি আমাদেরই পূরণ করতে হবে। আর সেজন্য এখন থেকেই ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। রাজ্যকে এই হিংসাশ্রয়ী, অমানবিক, মিথ্যাবাদী, ক্ষমতাপিপাষু মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর নিজস্ব কোম্পানি, তৃণমূল কংগ্রেসের হাত থেকে বাঁচাতে চাইলে ‘২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে সমূলে এদের উৎপাটন করতে হবে এবং এই দলের জন্মদাতা আরএসএস-বিজেপিকেও তাড়াতে হবে এরাজ্য থেকে। এখন থেকেই তার চূড়ান্ত প্রস্তুতি কমরেডদের শুরু করতে হবে মতাদর্শ, রাজনীতি, সংগঠন, সংগ্রাম–এই চার হাতিয়ারকে শানিত করে।
তথ্যসূত্রঃ দৈনিক গণশক্তি