লেনিনের মুর্তি ভাঙার ডাক অনেকেই দিয়েছেন। ক্ষমতার দম্ভে লেনিনের মুর্তি ভেঙে, বই পুড়িয়ে এমনকি লেনিনগ্রাদ থেকে লেনিনের শবদেহ সরিয়ে লেনিনের অবদান আর প্রাসঙ্গিকতাকে নিকেষ তো করা যায়ইনি, বরং এতে তাঁর প্রাসঙ্গিকতা বহুগুণ বেড়েছে। পৃথিবী জুড়েই এমন দৃষ্টান্ত আছে, আমাদের দেশে তো বটেই!
আমাদের দেশের বর্তমান শাসকদের মুখে বামপন্থী, বিশেষত মার্কসবাদ লেনিনবাদে বিশ্বাসীদের আনুবিক্ষনিক বলে উপেক্ষা করার পরেও লেনিনকেই তাঁরা শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে। তাঁর মুর্তি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে হয়। গত কয়েকবছর ধরে আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আরএসএস আর তার রাজনৈতিক দল বিজেপি লেনিনের মুর্তি ভাঙার অভিযান শুরু করে। সম্প্রতি আমাদের রাজ্য থেকে নির্বাচিত বিজেপির সাংসদ তথা দলে রাজ্য সভাপতি সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঘোষণা করেছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে এ রাজ্যেও লেনিন ভাঙবেন।সদর্পে বলেছেন ,কী অবদান আছে এ দেশে লেনিনের!
এটা ঠিক এই কদর্য বর্বর অর্বাচীন ভাষণের উত্তর দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, কিন্তু আজকের প্রজন্মের কাছে, ভারতবর্ষ ও লেনিন নিয়ে কিছু কথা মনে করিয়ে দেওয়ার দায় একজন দেশপ্রেমিক ও কৃতজ্ঞ ভারতীয় হিসেবে আমাদের গ্রহণ করতে হবেই।
রবীন্দ্রনাথ কিংবা গান্ধী এবং তাঁদের কাজ যেমন শুধুমাত্র ভারতের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের, তেমনি লেনিনও শুধুমাত্র সাবেক সোভিয়েত কিংবা আজকের আজকের রাশিয়ার হতে পারে না। লেনিন সমগ্র বিশ্বের; মানবতার কন্ঠস্বর। যদিও একথা দুনিয়ার দুশমন মুসোলিনির এদেশীয় অনুচরদের বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। লেনিন মানবতার পক্ষে, তাই মানবতার শত্রুদের আক্রমনের লক্ষ্য যে লেনিন হবেন–একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। লেনিন যেমন সারাটা জীবন জুড়ে জারের কুশাসনের বিরুদ্ধে নিজের দেশের শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির জন্য লড়েছেন, ঠিক তেমনি সারা বিশ্বের মানব মুক্তির জন্য সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বজ্রনির্ঘোষ ছিলেন লেনিন। তাইতো পরাধীন দেশের বিপ্লবী কবি সুকান্ত লেখেন,…..” লেনিন ভূমিষ্ঠ রক্তে ক্লীবতার কাছে নেই কোন ঋন, বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই লেনিন”
লেনিন দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের চেতনার ধ্রুবতারা।যেখানে শোষণ নিপীড়ন অত্যাচার সেখানেই প্রতিবাদের প্রেরণা লেনিন।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লেনিনের প্রত্যক্ষ পরোক্ষ অবদান কম নয়। লেনিনের সোভিয়েত বিপ্লব (১৯১৭)পূর্ববর্তী কালের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি কখনো উচ্চারিত হয় নি। এদেশের কয়েকজন দেশপ্রেমিক বিপ্লবী লেনিনের দেশে পৌঁছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন কমিউনিষ্ট পার্টি। শ্রমজীবী মানুষের প্রথম রাজনৈতিক দল, দেশের প্রতি ভালোবাসার সাথে সারাদুনিয়ার শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সংহতি বোধ। লেনিনই তাঁদের পরামর্শ দেন, নিজের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলধারায় যুক্ত থেকে বিপ্লবের পথে অগ্রসর হতে। যার অনিবার্য পরিণতি কংগ্রেসের আহমেদাবাদ অধিবেশনে(১৯২১) হসরত মোহানি কর্তৃক পূর্ণ স্বরাজের দাবি উথ্থাপন। গয়া অধিবেশনে(১৯২২) এম.এন.রায় পূর্ণ স্বাধীনতাকেই তাদের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহনের জন্য দাবি করেন। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুক্তি আন্দোলনের মতো ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কালবৈশাখীর ঝড় ওঠে। নজরুল বলেন, ….”কালবোশেখির কেতন ওড়ে, তোরা সব জয়ধ্বনি কর”
যখন ভারতীয় বিপ্লবীরা সমাজতন্ত্রের দীক্ষা নিয়ে দেশের মুক্তি যজ্ঞে আত্মনিয়োগ করেছেন, এদেশের শ্রমিক কৃষকরা জাতিধর্ম ভুলে সংগঠিত হয়ে ইনকিলাবির ধ্বনি তুলছেন, ঠিক তখনই আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরামর্শে সেই লড়াইকে ভাঙতে জন্ম হয় দুই যমজ সংগঠন আর এস এস আর মুসলিম লীগ।উদ্দেশ্য লক্ষ্য সব এক, ব্রিটিশ আনুগত্য, কমিউনিষ্ট বিরোধিতা। একদিকে সরকার কমিউনিষ্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করছেন, বিপ্লবী নেতাদের ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করে কারাগারে, দ্বীপান্তরে পাঠাচ্ছেন অন্যদিকে লীগ আর সংঘের প্রতি সরকারের গভীর বিশ্বাস।
লেনিনের প্রভাবে মুক্তির মন্দির সোপানতলে প্রান দিলেন সূর্য সেন ভগৎসিং আসফাকুল্লা, প্রীতিলতারা। কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন গণেশ ঘোষ ,কল্পনা দত্ত, মোজাফফর আহমেদ, সুবোধ রায়রা, আবার কারামুক্তির পর দেশের সাথে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জন্য উৎসর্গ করলেন নিজেদের।অন্যদিকে সাভারকররা ব্রিটিশের আনুগত্য স্বীকার করে রাজ অনুগ্রহ পেলেন।
নেতাজি থেকে নেহেরু সমাজতন্ত্রকেই ভারতীয় জনগণের মুক্তির পথ হিসেবে চিহ্নিত করলেন।
লেনিনই সর্বপ্রথম পৃথিবীর সর্বহারাদের একটি বৈপ্লবিক প্রতিষ্ঠানের বেদীতলে মিলিত মিলিত করবার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ সালে কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই শেখান নিজের দেশকে ভালোবাসতে শেয়ার পাশাপাশি সারা পৃথিবীর শোষণ মুক্তির প্রতি সংহতি জানাতে হয়। “আপন হতে বাইরে দাঁড়া, বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সারা।”
তিনিই সর্বপ্রথম বিশ্বের মানুষের কাছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শোষণ আর ভারতীয় জনগণের দুর্দশার ছবি তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক-এর পক্ষ থেকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ও ভারতীয় জনগণের পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিকে সমর্থন করা হয়।ভারতের স্বাধীনতা লাভের অনেকগুলো কারনের মধ্যে এটাও একটা।
আর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর লেনিন পরবর্তী সোভিয়েত সদ্যস্বাধীন দেশের পাশে দাঁড়ায়। ভারতে শিল্প স্থাপন থেকে মহাকাশ গবেষণা সোভিয়েত এর অবদান
অনস্বীকার্য। এমনকি সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ভারত মহাকাশে পাড়ি দেয়। ভারতের তেরঙ্গার পাশেই সোভিয়েত লাল পতাকা প্রদর্শিত হয়। ভারত পাক যুদ্ধে (১৯৭১) সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা পাকিস্তানের সহায়তায় এগিয়ে এলে সোভিয়েত এর নৌবহর ভারতের পাশে দাড়িয়ে ভারতের জয় ত্বরান্বিত করে।
মহামতি লেনিন ভারতের পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি বারবার সংহতি প্রকাশ করেছেন। জালিয়ানওয়ালাবাগের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান ও তাঁর পক্ষ থেকে ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রতিবাদ পত্র প্রেরন করা হয়
সম্পাদক সমীপেষু,
আপনার বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত জালিয়ানওয়ালাবাগের রক্তাক্ত সংঘর্ষে র বিবরণ মি.লেনিন পড়েছেন। তার পক্ষ থেকে ভারতীয় জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তিনি আমাকে একথা জানাতে বলেছেন যে, ভারতীয় সহযোদ্ধাদের ন্যায্য আদর্শের প্রতি সোভিয়েত সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।(১৮এপ্রিল,১৯১৯ অমৃতবাজার পত্রিকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পদাধিকারী লেনিনের পক্ষ থেকে প্রেরন করেন।)
লেনিন এদেশের বিপ্লবী নেতা স্বামী বিবেকানন্দের ভাই বিপ্লবী ভূপেন্দ্র নাথ দত্তকে চিঠি প্রেরণ করে ভারতের বিপ্লব সম্পর্কে তাঁর অভিমত প্রকাশ করেন। যে চিঠি বিপ্লবী ভূপেন্দ্র নাথ দত্তের চেতনার জগতকে আন্দোলিত করে। তিনি তাঁর “ডাইলেকটিকস অব ল্যান্ড ইকোনমিকস অব ইন্ডিয়া”র ভূমিকায় লেখেন এ চিঠি তাঁকে “ভারতের মুক্তি পথের সঠিক ভিত্তিটিকে চিনতে ও বুঝতে শিখিয়েছিল”
ব্রিটিশ সরকার বাল গঙ্গাধর তিলককে নির্বাসনদন্ড দিলে লেনিন তাঁর তীব্র প্রতিবাদ করে লেখেন “ব্রিটিশ শৃগালেরা ভারতীয় গণতন্ত্রী তিলক সম্পর্কে যে কুখ্যাত রায় ঘোষণা করে তাঁকে দীর্ঘমেয়াদী নির্বাসনদন্ড দিয়েছে, তার প্রতিবাদে একজন গণতন্ত্রীর বিরুদ্ধে টাকার মালিকদের তাঁবেদারদের এই প্রতিহিংসার প্রতিবাদে বোম্বাইয়ের রাস্তায় রাস্তায় ভারতীয় জনসাধারণের গণবিক্ষোভ আছড়ে পড়েছে, ধর্মঘটে অচল হয়ে গেছে শহর।(পলেতারি, ৫আগষ্ট,১৯০৮)
লেনিন ভারতীয় দেশপ্রেমিক বিপ্লবী আন্দোলন এর প্রতি কতটা শ্রদ্ধা প্রকাশ করতেন, তা জানা যায় ১৯২০ সালে প্রাভদা ‘তে প্রকাশিত ‘ভারতীয় বিপ্লবী সংঘের প্রতি’ রচনায়’ ; “রাশিয়ার মেহনতি মানুষ ভারতীয়দের এই জাগরনের দিকে উৎসাহ ভরে তাকিয়ে আছেন।…মুসলিম ও অমুসলিম জনতার ঘনিষ্ঠ মৈত্রীকে আমরা স্বাগত ও অভিনন্দন জানাই। এই মৈত্রী প্রাচ্যের সমস্ত সংগ্রামী মেহনতি মানুষের মধ্যে প্রসারিত হোক—আন্তরিক ভাবে আমরা এ কামনা করি।”
শুধু বিপ্লবী আন্দোলন কিংবা বিপ্লবী রাজনৈতিক নেতাদেরই নয় ভারতের চিন্তা জগতেও লেনিন ও সোভিয়েত এর প্রভাব বিস্তার করে।
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ মুসোলিনির ইটালি আর বিপ্লবোত্তর রাশিয়া ভ্রমণ করেন।একদিকে মুসোলিনি সম্পর্কে তার ধারনার পরিবর্তন হয় এবং ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর ঘৃনা ব্যক্ত করেন।অন্যদিকে রাশিয়ার কর্মযজ্ঞ তাঁকে অভিভূত করে। তিনি রাশিয়ার চিঠিতে তার প্রশংসা করেন। রাশিয়া কে তীর্থের সাথে তুলনা করেন।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের চোখে ধুলো দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের পয়লা নম্বর দুশমন লেনিন ও রুশ বিপ্লবের বার্তা এদেশে পৌঁছে ছিল। অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকারের রুশফোবিয়া বেড়ে যায়। ব্রিটিশদের তরফ থেকে লেনিন বিরোধী অপপ্রচার শুরু হয় যাতে লেনিন এর প্রভাব ভারতীয় বিপ্লবীদের কাছে আরো বেড়ে যায়। সে কালে নজরুলের গণবানী, প্রবাসী, আত্মশক্তি,শঙ্খ, বিজলী, প্রাচী প্রভৃতি পত্রিকায় লেনিনকে নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয়।
প্রাচীতে লেনিনের প্রয়াণে লেখা হয়, ‘ জগতের কল্যাণের জন্য যে সকল ক্ষণ জন্মা মহাপুরুষ সময় সময় আবির্ভূত হয় ………লেনিন তাদেরই একজন ….তাঁর মৃত্যুতে সমগ্র বিশ্ববাসী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
বলাবাহুল্য লেনিন ও তাঁর বিপ্লবী মতবাদ প্রচারের জন্য এই সমস্ত ভারতীয় সংবাদ পত্রকে ব্রিটিশ রাজশক্তির রোষানলে পড়তে হয়েছিল।
ভারতীয় কবিরাও লেনিনকে শ্রদ্ধা জানান তাঁদের কবিতায়। “সারে জাঁহাসে আচ্ছা”র কবি ইকবাল লেনিন নামে একটি দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন।
ভারতীয় কবিদের মধ্যে লেনিনের মৃত্যু তে শোকাহত হয়ে লেনিন কে নিয়ে প্রথম দীর্ঘ কবিতা রচনা করেন বাংলার কবি যতীন্দ্র প্রসাদ ভট্টাচার্য।
“যতদিন চন্দ্রমা তপন
তাঁরি কার্য তাঁহার বচন,
সদা অনুক্ষন,
জীবন্মৃত জাতি চিত্তে জ্বালাইবে দীপ্ত হুতাশন।
সত্য কি সে মরেছে লেনিন?
মরিতে আসেনি বিশ্বে, মরেনি সে চিরতরে হবে না বিলীন।”
এই কবিতা রচনার জন্য কবিকে পুলিশি নিপীড়নের শিকার হতে হয়।
এরপর লেনিনকে নিয়ে নজরুল সুকান্ত সহ বহু কবি গীতিকার নাট্যকার কবিতা গান নাটক রচনা করেন।
অন্যদিকে সেকালেও লেনিনের বিরুদ্ধে স্টেটসম্যান পত্রিকা কুৎসা লিখলে ,
শিব্রাম( শিবরাম চক্রবর্তী) আত্মশক্তি পত্রিকায় কলম ধরেন।তিনি লেখেন, “সব্যসাচীর জ্ঞাতি বিরোধের কুরুক্ষেত্রের চেয়ে লেনিনের শ্রেণী বিরোধের কুরুক্ষেত্র ঢের বড়ো আদর্শের দিক দিয়ে, মহত্ত্বের দিক দিয়ে।”
সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আত্মজীবনীতে লেনিন ও রুশ বিপ্লবের প্রতি সুগভীর শ্রদ্ধা ব্যক্তকরেন।” হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্তের কাল একদিন আসিবেই……….রুশ বিপ্লব সেই দিনের ঊষা কাল আমার সন্দেহ নেই।
শিবরাম কিংবা তারাশঙ্কর যে কমিউনিষ্ট ছিলেন না একথা বলাই বাহুল্য।
ঠাকুর পরিবারের অন্যতম সদস্য সোমেন্দ্র নাথ বাংলায় সহজবোধ্য লেনিনের জীবন রচনা করেন।সেই রচনার ভূমিকার সূচনা বাক্যটি ছিল
“এই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হচ্ছেন লেনিন।”
আসলে লেনিনের অবদানকে কোন দেশকালের সীমায় সীমায়িত করা যায় না। লেনিন শুধুমাত্র কমিউনিস্ট বা বামপন্থীদের কাছেই শ্রদ্ধার পাত্র নন, তিনি বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানবতাবাদী মানুষের অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবন ও কর্ম বিশ্বমানবতার জন্য নিবেদিত অন্যদিকে বলা বাহুল্য বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়াশীলদের কাছে তিনি এবং তাঁর কর্মকান্ড ক্ষমাহীন ভাবে নিন্দিত হয়েছে। এখনও হবে এটা স্বাভাবিক। মহান মার্কস বিশ্বে শোষণ মুক্তির দিশাকে সূত্রায়িত করেছিলেন ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং তাকে প্রয়োগের জন্য “দুনিয়ার মজদুর এক হও” আহ্বান জানান। মার্কস এর বিশ্বাস ছিল উন্নত পুঁজিবাদী দেশেই প্রথম সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত হবে। লেনিন ই দেখালেন কেন বিশ্বের যে কোনো দেশে বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে। মার্কসের ভাবনার পরম্পরা রক্ষা করেই তাকে পুনর্গঠন করে লেনিন তাঁর নতুন সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন সাম্রাজ্যবাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ এর মধ্য দিয়ে। এ দেশের কমিউনিস্টরাও সে পথের পথিক। লেনিন বিশ্বাস করতেন কোনো দেশের বিপ্লব কোনো দেশের বিপ্লবী আন্দোলনের রেপ্লিকা হতে পারে না। তাই ভারতের ক্ষেত্রেও সে কথাই প্রযোজ্য, আজ যখন দুনিয়ার সাথে এ দেশেও বৈষম্য ,দারিদ্র্য, বেকারি, ছাঁটাই, কর্মচ্যুতি প্রকট – তখন শোষণের বিরুদ্ধে শাসনের অবিচারের বিরুদ্ধে লেনিনের শিক্ষা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। যতদিন শোষণ থাকবে আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থাকবে লেনিন থাকবেন প্রতিবাদের ভাষ্যে, জনতার মুখরিত সখ্যে।
বিপ্লবী কবি সুকান্তের ভাষায় ধ্বনিত হোক——-
“যেখানে মুক্তির যুদ্ধ সেখানেই কমরেড লেনিন।
অন্ধকার ভারতবর্ষবুভুক্ষার পথে মৃতদেহ
অনৈক্যের চোরাবালি, পরস্পর অযথা সন্দেহ
দরজায় চিহ্নিত নিত্য শত্রুর উদ্ধত পদাঘাত
অদৃষ্টভৎসনা-ক্লান্ত কাটে দিন,বিমর্ষ রাত।
……………………..…….
লেনিন ভেঙেছে বিশ্বে জনস্রোতে অন্যায়ের বাঁধ
অন্যায়ের মুখোমুখি লেনিন জনতার প্রতিবাদ।”