“এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে/যেদিন হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান জাতি গোত্র নাহি রবে” এই অমোঘ মানবতাবাদী কথা(গান)টি লেখা হয়েছিল আজ থেকে অন্তততঃ দুশো বছরের আগে। আজকের চুড়ান্ত আধুনিকতাস্পর্শী সময়েও এমন কথা লেখা তো দূরের কথা, উচ্চারণ করতেও যথেষ্ট হিম্মত লাগে। যিনি এ গানের গীতিকার, এই বছর তাঁর জন্মের আড়াইশো বছর। তিনি বহুবর্ষজীবি ছিলেন।তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরে একটি সাময়িক পত্রিকা(পাক্ষিক হিতকরী,সম্পাদক মীর মোসারফ হোসেন,৩১ অক্টোবর১৮৯০)য় লেখা হয় “ইনি ১১৬বছর বয়সে গত ১কার্তিক,১৭অক্টোবর শুক্রবার প্রাতে মানবলীলা সম্বরন করিয়াছেন।”
সেই অনুযায়ী তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৭৭৪খ্রীষ্টাব্দে। সেই হিসেবে ত়াঁর জন্মের এটা আড়াইশো বছর। তিনি হলেন লালন ফকির।
লালন শব্দটি উচ্চারণ করলেই যে কথাগুলো আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তাহলো জাতপাতের বিরোধিতা, বিভেদহীন মানবতা আর জীবন বোধ। লালনের জন্মের বহুকাল আগে ঋকবেদে প্রথম উচ্চারিত হয়েছিল সন্দেহবাদ।
“কে জানে আসলে? কে বলতে পারবে? কোথা থেকে সৃষ্টি হয়েছিলো? দেবতাদের জন্ম সৃষ্টির পরেই হয়েছিলো। কে বলতে পারে সৃষ্টির রহস্য?” (ঋকবেদ)
যেখানে মানুষের সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরের অলৌকিক অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে বুদ্ধদেব তো সরাসরি পরজন্ম, আত্মাকেই অস্বীকার করে ইহজগত আর মানুষকেই শ্রেষ্ঠ বললেন। আরো পরে এই বাংলাতেই চন্ডীদাস ঘোষণা করেন”সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নেই।’ এসবের অর্থ অলৌকিকতা, স্রষ্টাকে অস্বীকার করে মানুষের জয়গান ।
পরবর্তীতে ভক্তিবাদ-সুফিবাদের যুগে এই বাংলার নদিয়াতে চৈতন্যদেব সরাসরি বর্ণাশ্রম প্রথা, জাতিভেদ, মনুনির্ভর ব্রাম্ভ্রণ্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বললেন,
“চন্ডালোহপী দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তি পরায়নঃ’ – আর সেই নদিয়ার লালন তার জীবন যাপন, মানব সাধনা আর গানে জাতপাতের সব প্রাচীর ভেঙে চুরমার করে দিলেন।গানের সুরের প্রচণ্ড অভিঘাতে ধাক্কা মারলেন সংস্কারের অচলায়তনে।
লালন তার জীবন আর গানে যেমন স্পষ্ট উচ্চারণ করেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন পরিচয় নিয়ে ততটাই আত্মবিমুখ ছিলেন। ফলে তাঁদের জীবন কাহিনি, জন্মতারিখ সবই রহস্যময়। যথেষ্ট বিতর্কিত, কিংবদন্তি নির্ভর। সংসার জীবনে তার প্রকৃত নাম বংশ পরিচয় নিয়ে অজস্র কাহিনি রয়েছে। তবে সব বিতর্ক থেকে সর্বশেষ ও নির্ভরযোগ্য সাধারণ মত, অষ্টাদশ শতকের নদিয়ার (বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া) কুমারখালির চাপড়া গ্রাম সন্নিকটে ভাঁড়ারা পল্লীতে গড়াই নদী তীরবর্তী হিন্দু কায়স্থ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার নাম ছিল লালন চন্দ্র কর। তিনি বিবাহিত ছিলেন।vশৈশবে পিতৃহীন হন। যৌবন বয়সের স্ত্রী ও বিধবা মাকে রেখে প্রতিবেশীদের সাথে তীর্থ ভ্রমণে (মতান্তরে গঙ্গাস্নান)গিয়ে দুরারোগ্য বসন্তে আক্রান্ত হন। এই অবস্থায় তার সহযাত্রীরা মুমূর্ষু লালনকে ফেলে গ্রামে ফিরে এসে বলেন লালনের মৃত্যু হয়েছে ও তাঁর গঙ্গা প্রাপ্তি হয়েছে। অসুস্থ লালনকে এই সময় জনৈক নিম্নবর্গীয় মুসলমান দম্পতি নিজ গৃহে নিয়ে আসেন ও সেবা শুশ্রূষায় সুস্থ করেন। লালন ত়ার গ্রামে ফিরে এসে সবকথা বলার পরেও লোকাচারে তার স্ত্রী ও মা ও পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। মুসলমানের ঘরে বাস ও খাদ্য গ্রহণ করায় তার জাতও যায়। লালন ফিরে আসেন তার আশ্রয়দাতার ঘরে। যারা ছিলেন সুফি সিরিজ স়াঁই এর শিষ্য।লালন সিরাজের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে হলেন লালন ফকির।জীবনের সুকঠিন অভিজ্ঞতা আর শিরাজ সাঁই এর মানবতার দীক্ষা তাকে জাত ধর্মহীন সাধকে পরিনত করলো। বেদবিধি ঈশ্বর আল্লাহ নয় মানুষই হলো তার উপাস্য। একতারার সুর আর স্বরচিত গানই হলো ত়াঁর উপসনার মন্ত্র।
তিনি তাঁর একমাত্র আত্মপরিচয় জ্ঞাপক গানে বলে ওঠেন, “সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে/লালন বলে জাতের কীরূপ দেখলাম না এ সংসারে!”
মূলত চৈতন্য প্রবর্তিত ভক্তিবাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব, লোকধর্ম সম্প্রদায়ের মরমী ভাবসাধনার প্রধান আশ্রয় ছিল সমবেত গান ও লোকজ সু্র।যা মানবতার পুজারি লালন ও আশ্রয় করেন। তিনি তাঁর গানে চৈতন্যদেবের প্রভাব স্বীকার করেছেন – “এসেছে এক নবীন আইন নদিয়াতে/বেদপুরান সব দিচ্ছে দুষে/সেই আইনের বিচার মতে।’
লালন ছিলেন জীবনমুখী সাধক,প্রগতিশীল স্রষ্টা। তিনি তার কাজে ও কথায় মানুষকেই সর্বশ্রেষ্ঠ সাধনবস্তু মানতেন। স্বর্গ নরক, জন্মান্তর, পরজন্ম, মোক্ষ, ঈশ্বরলাভ, বিভিন্ন অহেতুক ধর্মাচারন বিশ্বাস করতেন না।মানুষের ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়কে তিনি নস্যাৎ করতেন।বরং এই জাতধর্মের পরিচয় তার বিচারে জগতের সমূহ অনিষ্ট ও সর্বনাশের কারন হিসেবে ব্যাখ্যা করতেন। তিনি পার্থিব মানব জীবনের দ্বন্দ্বের-সংঘাতময় পরিবেশে দেহ আর চৈতন্যকে আশ্রয় করে মানবিক সিদ্ধিলাভকেই মূল কর্তব্য বিবেচনা করতেন।
“শুধাইলে খোদার কথা/দেখায় সবাই আশমানে/আছেন কোথায় স্বর্গ পুরে/কেউ নাহি তার ভেদ জানে।”
তিনি সকল প্রকার কুসংস্কার বিরোধী ছিলেন। ভুতপ্রেত জ্যোতিষ ভাগ্য জিন পরী, কল্পিত দেবতা তিনি মানতেন না। তিনি ধর্মগ্রন্থ ঈশ্বরের সৃষ্টি এই ধারণাকে সরাসরি নসাৎ করেছেন।
হিন্দু-মুসলমান দুই ধর্মের আচার অনুশাসনকে সাহসের সাথে অগ্রাহ্য করতেন। আর এর জন্য তিনি গোঁড়া ধর্মব্যবসায়ীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বারবার।
বর্ণাশ্রম প্রথা আর পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে গান লিখে তিনি যেমন রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের বিরাগভাজন হন, অন্যদিকে, ইসলামের অবশ্য পালনীয় রোজা নামাজ কলমা হজ জাকাতের চেয়ে মানুষ ভজনাকে মহত্বর বলে শরিয়তি বিধানকে প্রত্যাখান করে ঘোষণা করেন – “পড়গা নামাজ জেনে শুনে/নিয়েত বাঁধগে মানুষ মক্কা পানে।’
আর এই তথাকথিত ধর্মবিরোধী কথার জন্য মোল্লা মৌলবীদের লেঠেল বাহিনীর হাতে তাকে বারবার আক্রান্ত হতে হয়।বাধ্য হয়ে তিনি তার শিষ্যদের হাতে একতারার সাথে শক্ত বাঁশের লাঠিও তুলে দেন।
লালন কোনো নির্দিষ্ট ধর্ম সম্প্রদায়ের সৃষ্টি করেন নি। তিনি দুই ধর্মের অসারতা আর অহেতুক ধর্মবিধিকে সহজ সরল কথা আর গানে খানখান করেন। তিনি নিজে প্রচলিত শিক্ষাহীন স্বশিক্ষিত ও প্রখর যুক্তিবাদী ছিলেন। তার শিষ্যদের মধ্যে হিন্দু, মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের নিম্নবর্গের শ্রমজীবী কৃষক, কামার, কুমোর, জোলা প্রভৃতি ছিলেন। তিনি নিজের কোনো ধর্মীয় পরিচয় দিতে অস্বীকার করেছেন। কোনো ধর্মীয় আচার আচরণ পালন করতে না। এমনকি তার মৃত্যুর পরেও যেন কোনো ধর্মীয় প্রথায় অন্তেষ্টি না করা হয়, সেকথা শিষ্যদের বলে যান। শিষ্যরাও সেই নির্দেশ মান্য করেন।
লালন ছিলেন প্রতিবাদী নির্ভিক। সমকালীন অবিভক্ত নদিয়া তথা গ্রাম বাংলার নির্ভিক কৃষকবান্ধব পত্রিকা গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা (কাঙাল হরিদাস মজুমদার সম্পাদিত) য় কোলকাতার ঠাকুর জমিদারদের প্রজাপীড়নের সংবাদ ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হলে, জমিদারের বাহিনী সেই পত্রিকার প্রেস আক্রমণ করে। এই খবর পেয়ে লালন তার হিন্দু-মুসলমান শিষ্যদের একত্রিত করে লাঠিধারী প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তুলে কাঙালের প্রেস পাহারায় ব্যবস্থা করেন।
বাংলা লোকসংগীতের আরেক প্রবাদপ্রতিম স্রষ্টা হেমাঙ্গ বিশ্বাস এই প্রসঙ্গে লেখেন – “কাঙাল হরিনাথের অপ্রকাশিত দিনপঞ্জিতে দেখি সত্যি সত্যি লালন চরিত্র—ভোলা বাউল ; আবার প্রয়োজন হলে হতে পারেন জাদরেল লাঠিয়াল। হাতের একতারাটি রেখে জমিদারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লাঠিও ধরতে পারেন।…..লালনের গান আর জীবনে এখানেই মিল।”
তিনি হিন্দু সমাজপতিদের হাত থেকে সতীদাহ কালে সদ্য স্বামীহারা মৃত্যু পথযাত্রী নারীদের লাঠিয়াল শিষ্যদের দিয়ে রক্ষা করতেন।
লালনের গান জনপ্রিয়তা, সাহিত্যগুনে যেমন কালোতীর্ণ, ঠিক তেমনি এর ছত্রে ছত্রে মানুষের ঐক্য সম্প্রীতি ও সুমহান ভারতীয় বৈচিত্র্যময়তা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে।সহজ ও লোকায়ত এই গানের আবেদন ও যথেষ্ট শক্তিশালী। লালনই প্রকৃত পক্ষে বাংলা গণসংগীতের স্রষ্টা। আরেক জনপ্রিয় গীতিকার রবীন্দ্রনাথ এই তথাকথিত শিক্ষাহীন বাউল-ফকিরের গানের দর্শনভাবে নিজের প্রভাবিত হওয়ার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।
তিনি তথাকথিত হিন্দু মুসলমান বিরোধের বিরুদ্ধে লালনের গানের অবদান উল্লেখ করে বলেন –
“এ জিনিস হিন্দু মুসলমান উভয়েরই, একত্র হয়েছে অথচ কেউ কাউকে আঘাত করেনি।…এই গানের ভাষায় সুরে হিন্দু মুসলমানের কন্ঠ মিলেছে, কোরন -পুরানে ঝগড়া বাধেনি।এই মিলনেই ভারতের সভ্যতার সত্য পরিচয়, বিবাদে -বিরোধে বর্বরতা। বাংলাদেশের গ্রামের গভীর চিত্তে উচ্চ সভ্যতার প্রেরণা ইস্কুল কলেজের অগোচরে আপনা-আপনি কিরকম কাজ করে এসেছে, হিন্দু-মুসলমানের জন্য এক আসন রচনার চেষ্টা করেছে, এই বাউল গানে তার পরিচয় পাওয়া যায়।”(মুহাম্মদ মনসুরুদ্দিন সম্পাদিত লালনের জীবনীগ্রন্থ ‘হারামনি”র ভূমিকার অংশবিশেষ)
লালনের গান শুধুমাত্র চিত্ত বিনোদনের উপকরন ছিল না। এই গানে সমাজ বোধ,ইতিহাস, ভূগোল, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্র চিন্তা, সমকালীন ব্রিটিশ শাসক ও জমিদারের অত্যাচারের কথাও ফুটে উঠেছে। তাঁর গানে বিভিন্ন বিজ্ঞানের নানাবিধ আধুনিক উপলব্ধি ও স্বচ্ছ্ব ধারণা ব্যক্ত হয়েছে, তা সত্যিই অতুলনীয়। তাঁর গান ছিল সমাজের অসংগতি, ভাবজাগতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তিনি উচ্চ হৃদয়বৃত্তির সন্ধান করে যেকোনো অন্যায় এর বিরুদ্ধে সামাজিক সংগ্রামকেই মানবমুক্তির পথ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
তিনি কোন ধর্মীয় সংগঠন গড়ে তোলেননি বা গড়ে তোলার কথা ও বলেন নি। তিনি মনে করতেন, এই সম্প্রদায় গড়ে তোলা মানে, আরেক সম্প্রদায়ের শক্তি বৃদ্ধি করা। বরং যুক্তি আর বুদ্ধি দিয়ে সাম্প্রদায়িক উন্মত্ততাকে প্রতিহত করা জরুরি।কোনো অযৌক্তিক শক্তিমত্ততার উপর নির্ভর না করে, নিজের গান আর সুরের উপর নির্ভর করে মানুষকে যাবতীয় অন্যায় আর অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জাগরিত করছেন। লালনের এই জীবন দর্শন আজ আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
পরাধীন দেশের সাম্রাজ্যবাদী শাসক তাদের শাসন-শোষন কায়েম করার জন্য এদেশের হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যকে ভাঙতে ধর্মকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবর্তন করে। সাম্রাজ্যবাদী শাসকের পরিকল্পনায় জন্ম হয় আর এস এস -জামাতের।রাজনৈতিক কারনে লালনের অবিভক্ত বাংলা আজ আলাদা, কিন্তু দুদেশেই বর্তমানে দুই সাম্প্রদায়িক শক্তি অতি সক্রিয়।মানবতাবিরোধী ধর্মের ধ্বজাধারী পু়ঁজিবাদের দালাল ক্ষমতালোভী রাজনীতির কারবারীরা হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে উদ্যত। তারা উন্নত প্রযুক্তি আর প্রচার মাধ্যমকে ব্যবহার করে সুকৌশলে দেশের মানুষের মগজে ঢোকাতে চাইছে জাত, ধর্ম, বর্ণ, ভাষার পরিচয়ই এদেশের ইতিহাসের মূল ভিত্তি, তখন লালনের জীবন আর সৃষ্টি এই-ই এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে শানিত অস্ত্র হতে পারে।
জাতি ধর্মকে যারা মানুষের ওপরে স্থান দেয়, তারা আদতে মানবতার শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে লালনই তো বলতে পারেন,
“লালন বলে হাতে পেলে/জাতি পোড়াতাম আগুন দিয়ে”
এদেশের ক্ষমতায় মানবতাবিরোধী, ভারতীয় আদর্শ, বৈচিত্র্যময়তা, লোকায়ত জীবন বোধ, ধর্মনিরপেক্ষতার শত্রু ধর্মধ্বজাধারী হিংস্র কুটিল দাঙ্গাবাজদের পরিচালিত রাজনৈতিক দল। এরা শাখা প্রশাখা বিস্তার করে আমাদের দেশজ ঐতিহ্য ঐক্য কে ভাঙার কাজে সদা সচেষ্ট। লালন যে সমাজের স্বপ্ন দেখতেন, সেই সমাজচেতনা আর বৃহত্তর মানবতাকে এরা শেষ করতে চাই লক্ষ কুটীল ফনাবিস্তার করে।একে প্রতিহত করতে লালনের গান আমাদের শ্রেষ্ঠ আয়ূধ। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন জাত ধর্মের উর্ধ্বে মানুষ। মনুবাদকে আশ্রয় করে আমাদের উপর বর্ণভেদ, নারীকে ভোগ্য হিসেবে দেখার দর্শন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তখন লালনের জাতপাত বর্ণভেদের বিরোধী গান হোক আমাদের প্রচারের হাতিয়ার।
দেশকালের এই ভয়াবহ বিপদের সময়ে, মানবতার ঘৃণ্যশত্রুদের বিরুদ্ধে লালনের জীবন আর গানের চর্চা, প্রসার বিশেষ ভাবে জরুরি।
যুক্তি,প্রেম,আনন্দ আর প্রতিবাদের অনুপম মিশ্রনে তিনি যে রসায়ন সৃষ্টি করেছেন তাঁর গানে, সেই গান তাঁর জন্মের আড়াইশো বছর পরেও, এই সমস্যা সঙ্কুল ভোগবাদ সর্বস্ব জাতপাত বিদীর্ণ ক্ষতবিক্ষত সমাজ শোধনের পথকেই প্রশস্ত করবে।
➖➖➖