জিপিটি ➖ যার পুরো কথাটি হলো জেনারেটিভ প্রি-ট্রেন্ড ট্রান্সফর্মার। ট্রান্সফর্মার ➖ একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক বা স্নায়বিক অন্তর্জাল। স্নায়বিক বার্তা আদান প্রদান প্রক্রিয়া থেকে শিখে নিয়ে, এই নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে মানুষ।তবে, এখনও পর্যন্ত তা রয়েছে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। এই নেটওয়ার্কিং হলো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। মানুষের প্রশ্ন বুঝে নিয়ে, এই অতি শক্তিশালী গণক, ইন্টারনেটে থাকা অজস্র নথি থেকে, প্রায় সব প্রশ্নেরই কিছু না কিছু উত্তর ব্যবহার করে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। এর সাথে সাথে তার মধ্যে সম্পৃক্ত রয়েছে একটি শিক্ষণ ব্যবস্থাও। কেতাবি ভাষায় যাকে বলা হয়, রি- ইনফোর্সমেন্ট লার্নিং। এই প্রোগ্রাম এমন ভাবে তৈরি, যা দেখেও শেখে, ঠেকেও শেখে। সুপারভাইজড লার্নিং এখানে দেখে শেখা। একই জিনিস প্রচুর দেখিয়ে দেখিয়ে এই মেশিন গুলিকে চেনানো হয়। বহু উদাহরণ দেখে দেখে, সে যন্ত্রও একটি নতুন পরিস্থিতিতে কাজটি একই ভাবে করে ফেলবে।
আর রি – ইনফোর্সমেন্ট লার্নিং? এ অনেকটা ঠেকে শেখার মতো। বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে, তার করা কোন কাজ কতোটা ঠিকঠাক হ’ল, তা সে চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া ব্যবহারকারী মানুষের ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝে নেয়। পরে সে কাজটা আরও ভালো ভাবে সাধিত হয়। এর বিকৃত ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যে, ঘৃণা ছড়ানোর লক্ষ্যে, এর ব্যবহার যাতে না হয়, সে ব্যাপারে উদ্ভাবকেরা এখনও ক্রিয়াশীল। তারা কনটেন্ট ফিল্টারিং অর্থাৎ ব্যবহারকারী মানুষের পরিকল্পিত, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে সংগঠিত প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপনের মাধ্যমে, সিদ্ধান্তগ্রহন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার উদ্যোগকে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে বাদ দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় প্রযুক্তি-পুঁজির নিয়ন্ত্রণে গেলে কি হয়, আমরা তা দেখেছি। আমরা দেখছি, এযুগে সংবাদ মাধ্যম কিভাবে মালিকের দাসত্ব করছে ! ফলে নিউজভ্যালুও কমছে। সোস্যাল মিডিয়া পোস্ট ট্রুথ নয়, ফেক ছড়ানোর সূতিকাগার হিসেবে ব্যবহার করছে পুঁজি। দেখুন হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির অভিজ্ঞতা। প্রতিদিন মিথ্যে ছড়ানোর যন্ত্রীরা সেকাজ করাচ্ছে পয়সার বিনিময়ে, মিথ্যে ছড়ানোর লক্ষ্যে।
কিন্তু এর প্রভাব তো একমুখী হতে পারেনা। এই ট্রান্সফর্মারের ব্যবহার যেমন ছাত্রছাত্রীদের মৌলিক লেখার প্রবণতাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করবে, অন্যদিকে তা বহু গবেষণার কাজে বিপুল অগ্রগতি ঘটাতেও সাহায্য করবে।
ওয়ার্লড ইকনমিক ফোরাম – ২০২০ জানিয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ফলে ২০২৫ এর মধ্যে ৮৫ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) অর্থাৎ ৮.৫ কোটি মানুষের কাজ যাবে। শিক্ষকতা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, সৃজনশীল কাজে এখনই এর প্রভাব তেমন হয়তো নেই। তবে জন হেনরির মতো, মেশিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার ডাক দেওয়া তো কোন কাজের কথা নয়। এই প্রযুক্তি রপ্ত করেই আমাদের এগোতে হবে। রিপোর্ট বলছে, সারা পৃথিবীতে ৩৭৫ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) অর্থাৎ ৩৭.৫ কোটি কর্মীকে ২০৩০ সালের মধ্যে পেশা পরিবর্তনের জন্য তৈরি হতে হবে। এদের জন্য প্রয়োজন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ। নতুন কাজ, বিকল্প কাজও তৈরি হবে। চলছে সেসব সম্ভাব্যতা নিয়েও গবেষণা। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণতর অংশের জনগণকে সাথে নিয়ে শুরু করতে হবে নয়া প্রস্তুতি ; তা শুধু রাষ্ট্রের সদিচ্ছার ওপর ভরসা করে করা যাবে না। বিকল্পের লড়াইয়ের নির্মাণে আমাদেরই নামতে হবে। গ্রামশি এধরনের কাজে ভরসা করেছেন অর্গানিক ইনটেলেকচুয়াল’দের ওপর। এঁরাই আরও বহু পেশাদার বিজ্ঞানীদের যুক্ত করে বিকল্পের নির্মাণে এগোতে সাহায্য করবেন।
ভারতবর্ষে কাজটা আরও জরুরি। সারা পৃথিবীতে তরুণ, সম্ভাব্য কাজের জগতে আসার মতো মানুষের সংখ্যা এদেশেই সবচেয়ে বেশি। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্স (জনবিন্যাসগত সুবিধা) কে কাজে লাগাতে হলে, চাই যথার্থ প্রস্তুতি। শুধু সরকারী উদ্যোগের ওপর ভরসা করলে হবে না, এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হলে নয়া পরিস্থিতিতে, এদেশের যুব আন্দোলনেও নয়া উপাদান যুক্ত করতে হবে ; আর সে কাজটা একমাত্র বামপন্থীরাই পারবে।