নভেম্বর বিপ্লবের মাসে মুজফফর আহমেদ চর্চার গুরুত্ব
ড. বিশ্বম্ভর মন্ডল
১৯৯০র দশক থেকে পৃথিবী জুড়েই জীবন মানে শুধু ভোগ আর ভোগের রসদের জয়গান – এই ধারণার প্রচার ও প্রসার বেড়েছে। এই সময়ে যাদের কৈশোর কেটেছে তাদের সামনে একটা সত্যই উঠে এসেছে- ভোগ করতে হবে যেন তেন প্রকারেণ। এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অনেকেই জানেই না জীবন মানে কোন ত্যাগের গল্পও হতে পারে । এদের চেনানো হয় নি, জানানো হয় নি, এদের সামনে আড়াল করে রাখা হয়েছে এমন সব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম যারা দেশের জন্যে বছরের পর বছর জেলে কাটিয়েছেন। যাদের দেশপ্রেম, ত্যাগের সীমা আকাশচুম্বী হলেও, তাদেরকে জানেই না অনেক মানুষ- এর অন্যতম একটা কারণ দেশের মানুষকে জানানো হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে একটিই দলের নাম- সেটা হল কংগ্রেস। স্বাধীনতা এসেছে, মানুষ ইতিহাস বইয়ের পাতায় খুঁজে পায় নি অনেকের নাম যারা দেশের জন্যে সব দিয়েছেন- এমন একজন মানুষকে নিয়েই এগিয়ে যাব আজ পাঠকের সামনে। এটাও এই সময়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ এই কারণে যে, ঢাল তলোয়ার হীন নিধিরাম সর্দার হয়েও এরা পালিয়ে যান নি লড়াইয়ের ময়দান থেকে বা ব্রিটিশ পুলিশের চর হিসাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিখিত চিঠি দিয়ে জেল থেকে মুক্তির আবেদন করে বাঁচতে চান নি ‘বিশ্বাসঘাতক’ পরিচয় নিয়ে। রাজ্যে বা কেন্দ্রে কোথাও শাসন ক্ষমতায় না থেকেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকে কিভাবে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন মানুষের লড়াইয়ের হাতিয়ার সংগঠন । একের পর এক গড়ে তুলেছেন কৃষকের সংগঠন, শ্রমিকের সংগঠন, শ্রমজীবির সংগঠন। কমিউনিস্ট পরিচয় থাকার কারণে যাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ফুটনোটে ফেলে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর, চাইলে ধারাবাহিক ভাবে তাদের নিয়ে একটা সিরিজ প্রকাশের স্বপ্ন দেখার চেষ্টা শুরু করাই যায়। এই প্রবন্ধে আমি আলোকপাত করব যাকে তার নাম মুজফফর আহমেদ, ব্রিটিশ আমলে অনেকের কাছেই যিনি পরিচিত ছিলেন কাকাবাবু নামে।
“এক অদ্ভুত পরিস্থিতি চারদিকে। ভোট আছে, কিন্তু অনেকের বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার অধিকার নেই। মতাদর্শ আছে বইয়ের পাতায় বা নির্বাচনের ইস্তাহারে, প্রয়োগে তার প্রতিফলন নেই । মুখে হাসি ঝুলিয়ে ঘুরছে অনেকেই, অথচ কেউ কাউকে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না। গুণী মানুষ যথাযথ মর্যাদা পায় না, অথচ সেই দেশ ফুলে ফলে সমৃদ্ধ হবে এটা কখনোই সম্ভব না। তাই থমকে যায় বারবার দেশের প্রগতি।
রাজনীতির লোকদের প্রতি মানুষের চরম অশ্রদ্ধা, এটা নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের পক্ষে খুব সুখদায়ক বিষয় নয়। দোষ শুধু মানুষের না। রাজনীতিকরা অনেকেই ভুলে গেছেন মানুষ তাদেরকে কেমন দেখতে চায়, তাদের কাছ থেকে মানুষ কি আশা করে। রাজনীতিতে অনেকেই ঢুকে পড়েছে যারা পরোয়া করে না মানুষ কি চায় তাদের কাছে সেই নিয়ে। এই ধরনের বিষয়গুলো গণতন্ত্রের পক্ষে অশনি সংকেত। দলবদলটাও যেন কেমন এবেলা ওবেলা চোখ সওয়া বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে। মানুষ ভুলে যেতে বসেছে আদর্শ রাজনীতিকদের জীবন কেমন হওয়া উচিত। এই প্রবন্ধে আলোচনা করব রাজনীতির জগতের এমন এক ধারার বা ঘরানার মানুষের কথা যার জীবন যাপনের প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি আঙ্গিকের মধ্যে মানুষ খুঁজে পেয়েছিলেন নিজেদের নেতাকে। আলোচনা করব ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রাতঃস্মরণীয় মানুষ মুজফফর আহমেদকে নিয়ে”(১)। জীবন-যাপনে ছিলেন ধীর-স্থির, সরল, সাদাসিধে, অনাড়ম্বর এবং নিরহংকার । বিনয় আর নম্রতা ছিল তাঁর ভূষণ। মানুষের প্রতি ছিল অপরিসীম স্নেহ আর মমত্ববোধ। অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। নির্মোহ মানসিকতা আর একটা ত্যাগী মন নিয়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন। এমন একজন মানুষ কিভাবে ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টি গঠনের কাজে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন সেই বিষয়গুলো আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
কোন্ লক্ষ্যে রাজনীতির ময়দানে
এম এল এ /এম পি বা মন্ত্রী বা চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলর বা ব্যক্তিগত উন্নতির কোনো সিঁড়ি হিসেবে রাজনীতিকে ব্যবহার করার কোন স্বপ্ন থেকে তিনি রাজনীতিতে আসেন নি। রাজনীতিতে কেন এসেছিলেন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন “দেশে কমিউনিস্ট আন্দোলন সৃষ্টি করবো ও কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলব – এই অসাধ্য সাধনের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমি যবে পথে বার হয়েছি, নিজের অযোগ্যতার কথা প্রতিদিন প্রতিক্ষণ মর্মে মর্মে অনুভব করেছি। তবুও ভাবছি পথে যখন বার হয়ে পড়েছি তখন ফেরার পথ আর নেই”। তিনি রাজনীতির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দুটো বিষয়কে সম্বল করে-জনগণের উপর ভরসা আর কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল এর নির্দেশের প্রতি অকুণ্ঠ নিষ্ঠা।
কেমন করে কমিউনিস্ট হয়ে উঠতে হয়
সারা জীবন কমিউনিস্ট পার্টি করলেই কেউ কমিউনিস্ট হয়ে ওঠেন না। প্রতিদিনের জীবনে ধারাবাহিক অনুশীলনের মধ্যে দিয়েই কেউ কেউ কমিউনিস্ট হয়ে উঠতে পারেন, সবাই পারেন না এই কঠিন পথে হাঁটতে। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি কমিউনিস্ট হয়ে ওঠার কাজে ব্যয় করবেন – মুজফফর আহমেদ ছিলেন এই ঘরানার কমিউনিস্ট। কমিউনিস্টদের কয়েকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছিলেন। বৈশিষ্ট্যগুলো হল – “(১) কমিউনিস্টের সারা জীবন ছাত্র থাকতে হয়।
(২) যারা বৈপ্লবিক রাজনীতিতে শামিল হন তাদের দুঃখ কষ্টে জীবন যাপনের জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকতে হয়। (৩) আড়ম্বর ও আত্মপ্রচার সম্পন্ন কোন মানুষ কখনো কমিউনিস্ট হয়ে উঠতে পারে না ।
(৪) কোন বিষয়ের গভীরে প্রবেশ না করলে একজন প্রকৃত কমিউনিস্ট হওয়া যায় না।
(৫) কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য তাদের হওয়া উচিত যাদের কাছে মতাদর্শ ও পার্টি শৃঙ্খলা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত হয় ।
(৬) কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য তাদের হওয়া উচিত যারা পার্টি জীবনকে একজন নিরলস যোদ্ধার জীবন বলে বিশ্বাস করেন।
(৭) কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা একটি পরিবারের সদস্যদের মতো করেই জীবন যাপন করবেন ।
(৮) কমিউনিস্ট পার্টির কর্মীদের ব্যক্তিজীবনের সমস্যাও পার্টিকেই দেখতে হবে, কারণ পার্টি তাঁদের ব্যক্তিগত সমস্যা না দেখলে দেখার কেউ নেই এটা বিবেচনাতে রাখতে হবে।
(৯) কমিউনিস্টরা যে কোনো দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে আর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বাস করে মজুর শ্রেণীর আন্তর্জাতিকতায়। এই কারণেই সব দেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যদের পরস্পরের ভিতরে ভাইয়ের মত একটা বন্ধন আছে।
(১০) কমিউনিস্ট কর্মীরা কখনোই গণসংগঠনকে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে এক করে দেখার ভুল করতে পারেন না।
(১১) নিজের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে পূর্ণ মাত্রায় সচেতনতা থাকাটা একজন কমিউনিস্ট কর্মীর দায়িত্ব।
(১২) কমিউনিজমের আদর্শের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা, শ্রেণীশত্রুদের চিন্তাধারার প্রতি আপোষহীন ও নিরন্তর সংগ্রাম একজন কমিউনিস্ট চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ।
(১৩) যেকোনো রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়াশোনা করে বিষয়ের গভীরে গিয়ে এবং বিস্তারিত তথ্য জেনে কোনো কমিউনিস্ট কোনো বিষয়ের উপরে মত ব্যক্ত করবেন। মত দেবার আগে বিরোধী যুক্তিগুলো খুব মনযোগ দিয়ে অনুধাবন করার চেষ্টাও একজন কমিউনিস্ট এর দায়িত্ব”(২) ।শ্রমজীবীর হাতে ক্ষমতা – কোন্ পথে?
মুজফফর আহমেদ বলেছিলেন, “সুকঠোর শ্রেণীসংগ্রামের ভিতর দিয়ে এগিয়ে গিয়েই শ্রমজীবী জনগণ একদিন দেশে ক্ষমতা দখল করবেন। হঠকারিতার পথ বিপ্লবের পথ নয়….। হঠকারিতা জনগণকে দুঃখ- দুর্ভোগের অতল সাগরে ডুবিয়ে দেয়।….পথের শেষে পৌঁছাতে হলে সমস্ত পথ পার হয়ে যেতে হবে। মাঝপথে পথ সংক্ষেপ করে গন্তব্য স্থানে পৌঁছানো অসম্ভব। হটকারীরা তাই করতে চান। সংগ্রাম করার ধৈর্য ও একাগ্রতা তাদের নেই। তাদের লক্ষ্য সস্তায় বাজিমাত।….অতীতে আমরা হঠকারিতার জন্য অনেক মূল্য দিয়েছি।আর সেই পথে নয়। যত দুঃখ হোক, যত কষ্ট হোক, যত কাঁটা বিছানোই হোক না আমাদের পথ – আমরা বিপ্লবের পথ ধরেই চলব।….(৩) তিনি বারবার বলতেন – কমিউনিস্ট মতাদর্শকে বাঁচিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে সংশোধনবাদ ও সঙ্কীর্ণতাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম চালিয়ে যেতেই হবে।
সংসদীয় সংগ্রাম প্রসঙ্গে
সংসদীয় সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির অংশগ্রহণ নিয়ে যারা বিভ্রান্তি তৈরিতে মদত দেন, তারা কমিউনিস্ট বিরোধিতার রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থেকেই সেটা করেন । এরা এমন ভাবে প্রচার চালায় যাতে আপাতভাবে মনে হয় যেন সংসদীয় সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করছে তাদের একমাত্র লক্ষ্য বিপ্লবের পথ পরিত্যাগ করা ও সুখ আরামের পথে ছুটে চলার জন্য রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রীয় সরকার দখল করা । এরা বোঝানোর চেষ্টা করে, যারা বন্দুক নিয়ে জলে, জঙ্গলে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে- তারাই আসল বিপ্লবী। বাস্তবে এদের বিরোধিতা কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে । যে ধারার কমিউনিস্ট হোক তাদেরকে সমাজের চোখে ছোট করার জন্য এরা পেশাদার প্রচারকের ভূমিকা নেয়। এই প্রসঙ্গে মুজফফর আহমেদ বলেছেন, সংসদীয় নির্বাচনের গুরুত্ব আমরা অস্বীকার করি না। নির্বাচনের ভিতর দিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির ভাবধারা প্রচারিত হবে, আর পার্টির প্রভাব প্রসারিত হবে। … নির্বাচনে আমরা যদি কোন রাজ্যে সংখ্যাধিক্য লাভ করি তবে আমরা সেই রাজ্যে সরকারও গঠন করব এবং সেই সরকারকে সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করব। কিন্তু কোন কমিউনিস্ট যদি ভাবেন যে, সরকার গঠন করে তিনি লক্ষ্যে পৌঁছেছেন তবে তিনি কমিউনিস্টদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবেন ।
কমিউনিস্টদের দেশপ্রেম
পৃথিবীর সব দেশেই কমিউনিস্টদের নিয়ে কুৎসা করার কাজে একদল পেশাদার বুদ্ধিজীবি বা কলমচি থাকেন । এরা প্রচার করেন কমিউনিস্টরা নাকি দেশপ্রেমিক নয় । এই কমিউনিস্ট বিদ্বেষীরা দাবী করেন, কমিউনিস্টরা সারা পৃথিবীর সমস্যা নিয়ে যতটা ভাবেন, তার কিয়দংশ নিজের দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবেন না। কমিউনিস্টদের দেশপ্রেম প্রসঙ্গে মুজফফর আহমেদ বলেছিলেন, “মজুর শ্রেণীর আন্তর্জাতিক সংহতি ও ভ্রাত্রীয়তাকে ধনিক শ্রেণী বিদ্বেষের চোখে দেখে, এইজন্যেই ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধিরা প্রচার করে বেড়ায় যে মজুর শ্রেণীর পার্টির অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যরা দেশপ্রেমিক নয়। ধনিক শ্রেণীর দেশপ্রেম পররাজ্য গ্রাস করা। জগতের ইতিহাসে ধনিক শ্রেণী দেশপ্রেমের এই পরিচয়ই দিয়ে এসেছে। আর কমিউনিস্ট পার্টির নিকটে, সঙ্গে সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টিদের দ্বারা গঠিত ও পরিচালিত রাষ্ট্রগুলির নিকটেও, সর্ব দেশের স্বাধীনতা ও আত্মস্বাতন্ত্র পরম পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয়।”(৪)
দলের মুখপত্র ও দলের তত্ত্ব চর্চা
দলের তত্ত্ব প্রচার ও দলের মুখপত্র প্রসঙ্গে মুজফফর আহমেদের মনোভাব আলোচনা না করলে সে আলোচনা কখনোই পূর্ণাংগ রূপ নিতে পারে না। “কমিউনিস্ট পার্টি কোন্ মতাদর্শে বিশ্বাস করে এই বিষয়ে আগ্রহ না দেখিয়ে যদি কোন কমিউনিস্ট কর্মী ভাবেন ‘বেশ তো চলে যাচ্ছে’ সেটা একটা ভুল পথ। ঠিক তেমনি কোনো কর্মী যদি শুধু বইয়ের পাতাতেই মুখ গুজে পড়ে থাকেন একইভাবে তাঁর পক্ষে পরিস্থিতির সমস্ত বিশ্লেষণ বাস্তব ঘেষা করা সম্ভব নাও হতে পারে”(৫)। দলের মতাদর্শ নিয়ে পড়াশোনা, আবার মাঠে ময়দানে কাজ – এই দুটো কাজকে ভারসাম্য রেখে যারা চলতে পারেন তারা দলের কাজকে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষ কর্মী হয়ে ওঠেন এনিয়ে সন্দেহ নেই। এই বিষয়ে মুজফফর আহমেদ সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, সমাজ ও সমাজতন্ত্র সম্পর্কে চেতনা সামগ্রিকভাবে শ্রেণিচেতনা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কখনো জাগতে পারে না, তাকে প্রবেশ করাতে হয়। একইসাথে বলেছিলেন- মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলতে হবে। কমিউনিস্ট মতবাদের তত্ত্ব ও ভাবধারা প্রচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন “অশেষ দুঃখ কষ্টের ভেতর দিয়ে কমিউনিস্টদের কাজ করতে হয়েছে। তাদের না ছিল থাকার জায়গা, না ছিল খাওয়া-পরার ব্যবস্থা, তবু তারা দুঃসাহসে ভর করে এতসব কাগজ বার করতে পেরেছিলেন “।(৬)
স্বাধীনতার ৭৫ বছর বা কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ পার করেও নভেম্বর বিপ্লবের মাসে আজও তাকে নিয়ে কোন কথার আলোচনা পুরনো কথা বা বহুচর্চিত কথা বলে মনে হয় না। বরং মনে হয় এমন মানুষদের জীবন নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে তুলে ধরা দরকার যাতে করে নতুন প্রজন্ম ভাবতে শেখেন যে রাজনীতির মানুষরা এমন হতে পারেন, যাদেরকে আগামী সমাজ শতবর্ষ পরেও মনে রাখবে।
তথ্যসুত্রঃ
(১) নতুন চিঠি, সংবাদ সাপ্তাহিক, ৪৫ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা, বর্ধমান, ২১ নভেম্বর, ২০২২, পৃ-২
(২) নতুন চিঠি, প্রাগুক্ত, পৃ-২
(৩) গণশক্তি পত্রিকা, ২ জুলাই, ১৯৬৭
(৪) মুজফফর আহমেদ, সমকালের কথা, এন. বি. এ, ১৯৬১, পৃ-৩৪
(৫)নতুন চিঠি, প্রাগুক্ত, পৃ-৩
(৬) মুজফফর আহমেদ, সমকালের কথা, এন. বি. এ, ১৯৬১, পৃ-৬২