বাবা মা আদর করে নাম রেখেছিলেন তামান্না । তামান্না মানে ইচ্ছে, আকাঙ্ক্ষা। আসলে মোলান্দির হুসেইন আর সাবিনার এর আগে তিন তিনটে মেয়ে জন্মের পরেই আতুর ঘরের মারাগেছে।এর পর কোল আলো করে আসে ছোট্ট মেয়েটি, ফর্সা টকটকে মিস্টি মুখের মেয়েটা আতুর ঘরে দিব্বি বেঁচে যায় । কদিন পরেই তাই গরীব বাবা মা আদর করে তাদের ইচ্ছাপূরণ মেয়েটির নাম রাখেন তামান্না। গ্রামের স্কুলে ভর্তি হয় তামান্না, পাড়ার সকলের আদরের ছিল তামান্না। সারাদিন মোলান্দি গ্রামে ঘুরে বেড়াতো। পছন্দের রং ছিল লাল।আজো ওর পরনে ছিল লাল সালোয়ার। রক্ত লেগে যেটা আরো লাল দেখাচ্ছিল আজ।১৯জুন কালিগঞ্জে উপনির্বাচন। তৃনমূলের বিধায়কের মৃত্যুর শূন্য আসনে ভোট। একদিকে তার মেয়ে অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে তৃনমূলের প্রার্থী। কৃষ্ণনগরে সাংসদ দলের জেলা সভাপতি দেশের বাইরে, এই ভোটে পা দেন নি একদিন ও।এর আগে বিধায়কের স্মরন সভা নিয়ে দুটো পাল্টা অনুষ্ঠান দেখেছেন কালিগঞ্জ বাসী। এমনকি বিধায়ক বেঁচে থাকতেও তৃনমূলের সাংসদ আর তাঁর তোলাবাজি নিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন। যার পরিণতিতে তৃনমূল এলাকার মাদ্রাসা ভোটে জিতে বিধায়কের বাড়ির সামনে বোমা ফাটিয়ে উল্লাস করেছেন । এবার সেই বিধায়কের কন্যা তৃনমূল প্রার্থী। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এসে কালিগঞ্জের সব হিন্দু কে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আদেশ দিয়ে ঘোষণা করেছেন এখানে সব মুসলমান তৃনমূলকে ভোট দিয়ে জেতাবে।
ফিরহাদ হাকিম সহ তৃনমূল নেতারা এসে সেই কাজে যোগ্য সঙ্গদ দেন। তৃনমূলের ব্লকের নেতারা পলাশির বাজারে দোকানে দোকানে হুমকি দিতে থাকেন ভোটের পর দেখে নেবেন ।
অন্যদিকে সি পি আই এম এর শক্ত ঘাঁটিতে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার তাগিদে জাতীয় কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে সি পি আই এম সহ বাম কর্মী সমর্থকরা রুটি রুজি জীবন জীবিকার কথা সম্প্রীতির কথা তুলে ধরে প্রচার শুরু করেন। মোলান্দি গ্রামেও সেই প্রচারের ঢেউ লাগে। প্রার্থীকে নিয়ে শয়ে শয়ে মানুষ লালঝান্ডা আর তেরঙ্গা কাঁধে মিছিল করে। ছোট্ট তামান্নার বাবা হুসেইন তার হাওড়ার হকারির কাজ বাদ দিয়ে লালঝান্ডার কর্মী হিসেবে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে মোলান্দি এসে সেই মিছিলে যোগ দেয়। ছোট্ট তামান্না তার প্রিয় রং লাল পতাকার পাশে তেরঙ্গা পতাকা তাদের বাড়িতে বাঁধতে দেখে বাবার কাছে জিজ্ঞেস করলে বাবা বলে এবার একজোটে হাতে ভোট ।এই লড়াইয়ে ওরা আমাদের বন্ধু।
ভোটের দিন কিছুটা নির্বিঘ্নে ভোট হয়। মাঝে মাঝে মোলান্দির বামেদের শক্ত ঘাঁটিতে বুথের বাইরে ভয় ভিতি দেখালেও শেষ পর্যন্ত ভোট মেটে।
ভোট শেষে গতকাল তামান্নার বাবা মেয়েকে আদর করে কাজে যান। বলে যান, সাবধান করে বলেন, সাবধানে থাকবে, পড়াশোনা করবে মন দিয়ে।
আজ ছিল সেই ভোটের গণণা। সকাল থেকেই খবর আসছিল তৃনমূল জিতছে।
মার্জিন বাড়তেই গণনা চলাকালীনই গণনা কেন্দ্রের ঢিল ছোড়া দূরত্ব থেকে গ্রামে গ্রামে শুরু হয় মুহুর্মুহু বোমার শব্দ,জয় বাংলা শ্লোগান। পিসি ভাইপোর জয়ধ্বনি।
মোলান্দি গ্রামেও শুরু হয় বাড়তি উৎসাহে শকেট ছুঁড়ে বিজয় উল্লাস । বেছে বেছে সি পি আই এম এর সমর্থক দের বাড়ির দেওয়ালে বোমা, গালাগাল আর জয়ধ্বনি । হুসেইন এর বাড়ির সামনে পড়ে বোমা। বাড়ির ভেজা উঠানে খেলছিল তামান্না । বোমার ঘায়ে গলা থেকে মুখ বুক ফেটে রক্তে ভিজে গেল তামান্নার লাল সালোয়ার।মা সাবিনা ছুটে এসে দেখেন তখনো পাশবিক উল্লাসে ফেটে পড়ছে জল্লাদেরা। এই ছবি তো ইতিমধ্যে সারারাজ্য দেখেছে বারবার।আর কত? এখনো নীরব থাকবেন। ওদের জয় মানে আপনার ছেলে মেয়ের চাকরি চুরি, সাবিনারদের কোল খালি হওয়া।আর জি কর থেকে তামান্না আজ বিচার চায়ছে?পলাশির সাধারণ মানুষ বলছেন, তামান্নার জানাজায়(শেষ কৃত্যে)চলো,কবরের মাটি ছুঁয়ে বলো, খুনিদের বাংলা ছাড়া করো।
ছাত্ররা পলাশিতে আওয়াজ তুলেছে
তামান্না আমার বোন
খুনি ধরো প্রশাসন।
এবার অন্ততঃ ভয় ভীতি প্রলোভন ছেড়ে বলুন
এই জল্লাদের উল্লাস মঞ্চ কালিগঞ্জ থেকে বাংলা কে হতে দেব না।
এক মুহুর্তের জন্য আপনি ভুলে যান, আপনি কোন পার্টি করেন, একবার আপনার পরিচয় হোক মানুষ, একবার আপনার বিকিয়ে যাওয়া বিবেকটাকে জাগ্রত করুন। চোখ বুজে ভাবুন তামান্নার ক্ষত বিক্ষত মুখটা মনে করুন। প্রশ্ন করুন নিজেকে। এদের ক্ষমা করবেন, এদের মদত দাতাদের বিরুদ্ধে এবার সরব হোন।
আর কবে? এবার পথে না নামলে আপনার বোন মেয়ে অথবা ইতিহাস আপনাকে ক্ষমা করবে না।